প্রথম আইফোনআইফোন এখন সবাই চেনেন। কিন্তু এর ইতিহাস জানেন কি? গতকাল ২৯ জুন এক দশক পূর্ণ করল মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের তৈরি আইফোন। ১০ বছর আগে ২০০৭ সালের ২৯ জুন তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এসেছিল প্রথম আইফোন। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ২০০৭ সালের জানুয়ারি সানফ্রান্সিসকোতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইফোনের ঘোষণা দেওয়ার ছয় মাস পর বাজারে এসেছিল প্রথম আইফোন।
বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার সময় স্টিভ জবস বলেছিলেন, তিনটি বৈপ্লবিক উদ্ভাবনী পণ্যের সমন্বয় আইফোন। একটি হচ্ছে বৈপ্লবিক মোবাইল ফোন, প্রশস্ত পর্দার স্পর্শ নিয়ন্ত্রণযোগ্য আইপড যুগান্তকারী ইন্টারনেট যোগাযোগের যন্ত্র, যাতে ডেস্কটপের মতো মেইল আদান-প্রদান, ওয়েব ব্রাউজ, সার্চ ম্যাপ দেখা যায়। বছরের পর বছর ধরে বিশ্বজুড়ে অ্যাপল-ভক্তদের কাছে বিশ্বস্ত পণ্যের নাম হয়ে উঠেছে আইফোন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশজুড়ে নতুন আইফোন বাজারে আসা নিয়ে তৈরি হয় চরম উন্মাদনা।

আইফোনের ইতিহাস
আইফোনের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছেন অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। তাঁর হাত ধরেই এসেছে মোবাইল ফোনের যুগ পরিবর্তনকারীআইফোন প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট স্লেট ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, আইফোন তৈরির আগে গান শোনার যন্ত্র হিসেবে আইপড বাজারে এনেছিল অ্যাপল। অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জবস মিউজিক প্লেয়ারের যুগের সমাপ্তি দেখতে চেয়েছিলেন। তাই বাজারে মিউজিক প্লেয়ারের বিকল্প হিসেবে আইপডের স্থান দখল করে নিতে পারে এমন পণ্য তৈরির ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।
অ্যাপলের কর্মকর্তারা ২০০৪ সালে ধারণা করেছিলেন, অ্যাপল যদি মিউজিক প্লেয়ারের বিকল্প তৈরি না করে, তবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান মুঠোফোনের মতো ফোন কল, ভিডিও দেখার প্রযুক্তি গান শোনার যন্ত্র একত্র করে নতুন পণ্য বাজারে আনতে পারে। তাদের মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, আইপডের বাজার দখল করতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নতুন পণ্য বাজারে ছাড়তে পারে। এরপর থেকেই আইফোন তৈরির জন্য প্রস্তুতি শুরু করে অ্যাপল।
২০০৫ সালেই স্টিভ জবস অ্যাপলের প্রকৌশলীদের টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তির পণ্য নকশা করার নির্দেশ দেন। স্টিভ জবস ২০০৭ সালের জানুয়ারি সানফ্রান্সিসকোতে প্রথম আইফোন বাজারে আনার ঘোষণা দেওয়ার সময় তিনি আইপডের একটি ছবি দেখান, যাতে ক্লিক হুইলের পরিবর্তে রোটারি ডায়াল বাটন ছিল। তবে অ্যাপলের মুঠোফোনে রোটারি বাটন যুক্ত করেনি। কারণ, ওই সময় স্যামসাংয়ের এক্স৮১০ মডেলের মুঠোফোনটির মডেলে রোটেটিং হুইল ছিল।
তবে অ্যাপলের প্রথম আইপড নকশাকারী হিসেবে পরিচিত প্রকৌশলী টনি ফ্যাডেল স্টিভ জবসের রোটেটিং হুইলযুক্ত নতুন পণ্যটির ধারণাকে বাতিল করে দেন এবং ক্লিক হুইলের পরিবর্তে মাল্টি টাচ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করার কথা জানান। টনি ফ্যাডেলের পরামর্শ গ্রহণ করে অ্যাপলের প্রকৌশলী দলকে দুই ভাগে ভাগ করে দেন স্টিভ জবস। একটি দল সফটওয়্যার আরেকটি দল হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করে। সফটওয়্যার দলটির মূল কাজ ছিল সুন্দর ইন্টারফেস তৈরি করা আর হার্ডওয়্যার দলটির কাজ ছিল মানুষের পছন্দসই একটি মুঠোফোনের নকশা তৈরি করা।
অ্যাপলের মুঠোফোনের নকশাকারী দলটি স্টিভ জবসের সামনে পাতলা, মোটা, গোলাকার ডিসপ্লেসহ একাধিক নকশা উপস্থাপন করে। কিন্তু তিনি আরও সহজতর নকশার কথা বলেন। ২০০৬ সালে অ্যাপলের নকশাকারী দলটির প্রধান জোনাথন আইভ আইফোনের জন্য একাধিক নকশা চূড়ান্ত করেন। তবে স্টিভ জবস পছন্দ করেছিলেন জোনাথন আইভের নকশা করা ২০০৪ সালে বাজারে আসা আইপড মিনি সাদৃশ্যের ধাতব পদার্থের তৈরি প্রোটোটাইপটি। আর প্রোটোটাইপটির নকশাতে আরও পরিবর্তন করেন জোনাথন আইভ। এরপরই তৈরি শুরু হয় আইফোনের।
২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান এটিঅ্যান্ডটির সঙ্গে চুক্তিতে আইফোন বাজারে আনার ঘোষণা দেয় অ্যাপল। ২৯ জুন ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রথম আইফোন বিক্রি শুরু হয়। ২০০৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স জার্মানির বাজারে আইফোন বিক্রি শুরু হয়।
দ্বিতীয় প্রজন্মের আইফোন ৩জি ১১ জুলাই ২০০৮ সালে বাজারে আনার ঘোষণা দেয় অ্যাপল। তৃতীয় প্রজন্মের আইফোন ৩জিএস বাজারে আসার ঘোষণা এসেছিল জুন ২০০৯ তারিখে। ২০১১ সালের অক্টোবর বাজারে আসে পঞ্চম প্রজন্মের আইফোন ৪এস। ২০১১ সালের অক্টোবর স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পর নতুন প্রজন্মের আইফোন বাজারে আনার ঘোষণা দেয় অ্যাপল। আইফোনের প্রতিটি নকশায় স্টিভ জবসের হাত ছিল বলে প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা ধারণা করেন। কিন্তু স্টিভ জবসকে ছাড়াই ষষ্ঠ প্রজন্মের আইফোন বাজারে ছাড়ে অ্যাপল।

এরপর বাজারে এসেছে আইফোন ৫সি, ৫এস, আইফোন , প্লাস, ৬এস, ৬এস প্লাস, , প্লাস। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে আইফোন -এর ঘোষণা দেন টিম কুক। বছর দশকপূর্তি উপলক্ষে নতুন নকশার আইফোন বাজারে ছাড়তে পারে অ্যাপল।



Copyright © 2013 খবর